Hazrat Umar (ra.): Biography

Islamic Women

শুক্রবার, ২৪ মে, ২০১৩


‘সংসদ ভেঙে গেলেও ২০২১ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন হাসিনা’ 



গামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সংকট দিন দিন জটিল হচ্ছে। এর মধ্যে আরেকটি জটিল ও সাংবিধানিক সমস্যা হতে পারে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হস্তান্তর ও মেয়াদ নিয়ে। কারণ বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে গেলেও প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করলে ৩-৪ বছর বা ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। সংবিধান তাকে সেই ক্ষমতায় দিয়েছে। সংসদের মেয়াদ শেষে সংসদ সদস্যরা না থাকলেও প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা নিয়োগ করে ওই সময়ে সরকার পরিচালনা করতে পারবেন এবং ক্ষমতায় তার ইচ্ছা অনুযায়ী থাকতে পারবেন। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. তুহিন মালিক গতকাল এ তথ্য দেন।
এদিকে বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেছেন, আইন বলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীনও সময়ে থাকবেন। বিএনপিসহ অন্য দলগুলোর দাবি— তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সরকার বলছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা। এখন সবকিছুই আলোচনার ওপর নির্ভর করছে। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা থাকবে কি না, ওই সময়ে কী ধরনের সরকার থাকবে তার ওপরই সবকিছু নির্ভর করছে।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেন, সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীই বহাল থাকবেন। এই বিষয়ে কোনও রীতি এখনও গড়ে ওঠেনি। সবকিছু নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর। যেমন রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে জাতীয় সংসদের স্পিকার, স্পিকার না থাকলে ডেপুটি স্পিকার দায়িত্ব পালন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর বিষয়টিও সমাধান করা যাবে। গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য থাকে না। প্রধান বিচারপতি বিদেশ সফরে গেলে অস্থায়ী প্রধানবিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন একজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি। তাই পদ শূন্য থাকে না।
ড.তুহিন মালিক বলেন, সংবিধানের ৫৭ এর ৩ ধারার কথা উল্লেখ করে বলেন, সেখানে রয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকিতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই অযোগ্য করিবে না।’ তিনি বলেন, এই ধারা অনুযায়ী পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহাল থাকবেন।
ড. তুহিন মালিক আরও বলেন, ৩ মাস আগে সংসদ সদস্যরা চলে গেলেও প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। সংসদীয় আসনের সীমানা পুননির্ধারণ নিয়ে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে তাকে কেন্দ্র করে কেউ যদি সুপ্রীম কোর্টে মামলা দায়ের করেন, তাহলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারবেন না নির্বাচন কমিশন। কারণ, এই জটিলতার কারণে নির্বাচনের ওপর আদালতের স্থিতাবস্থা আসতে পারে। এমন অচলাবস্থা তৈরি হয় ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে। ডিসিসি’র মেয়াদ শেষে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
তুহিন মালিক বলেন, আগামী ২৫ জানুয়ারি সংসদের মেয়াদ শেষ হলে সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করলেও প্রধানমন্ত্রী যেহেতু থাকবেন, তিনি প্রশাসকের ন্যায় ওই সময়ে ১০-১৫ জন উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতাপ্রাপ্ত থাকবেন। সেক্ষেত্রে সংসদ না থাকায় মন্ত্রী-এমপি থাকবেন না। এভাবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীই ৩-৪ বছর নির্বাহী ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে আদালতের শরণাপন্ন হলে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ হিসেবে তা আদালতের বৈধতা পেতে পারে। ওয়ান ইলেভেনের সরকারও সেইভাবে বৈধতা পেয়েছে। পৃথিবীর কোনও দেশে এই বিধান নেই যে, সরকার বহাল রেখেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধানে সেই বিধান রাখা হয়েছে। সংবিধানের কোথাও তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বতীকালীন সরকারের কথা নেই।
তুহিন মালিক আরও বলেন, সংবিধানের ১২৩ (৩) ধারায় উল্লেখ আছে, সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে, (ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে।’ যা একটি বিরল ঘটনা। পৃথিবীর কোনও দেশেই এই পদ্ধতি নেই। অন্যদিকে (খ) অনুচ্ছেদে আছে— ‘মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনও কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে, তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার (ক) উপ-দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ, উক্ত উপ-দফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত, সংসদ সদস্যরূপে কার্যভার গ্রহণ করিবেন না।’
ড. তুহিন মালিক যথাসময়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন না হওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেন। বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কর্মসূচি পালন করতে পারছে না। ডিসি, এসপি, ইউএনও সরকারের অধীন। সব স্তরে বর্তমান সরকারের জনবল রয়েছে। নির্বাচন কমিশনও তাদের নির্দেশনায় চলছে। তাই নির্বাচনের সময় সরকারের পক্ষপাত থাকবেই। অন্যদিকে অন্য কোনও দল নির্বাচনে জয়ী হলেও প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা না ছাড়লে করার কিছু থাকবে না, যদি না তিনি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। তাই সংলাপই বড় সুরাহা। এবং তা এখনই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন