Hazrat Umar (ra.): Biography

Islamic Women

শনিবার, ২৫ মে, ২০১৩


কাজী নজরুল ইসলাম-এর কবিতা  

 

মানুষ  

কাজী নজরুল ইসলাম  
গাহি সাম্যের গান-
মানুষের চেয়ে কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান,
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,
সব দেশে, সল কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।
‘পূজারী, দুয়ার খোল,
ক্ষুদার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে পূজার সময় হলো!’
স্বপ্ন দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয়
দেবতার বরে আজ রাজা-টাজা হ’য়ে যাবে নিশ্চয়!
জীর্ণ-বস্ত্র শীর্ণ-গাত্র, ক্ষুদায় কন্ঠ ক্ষীণ
ডাকিল পান্থ, ‘দ্বার খোল বাবা, খাইনি তো সাত দিন!’
সহসা বন্ধ হ’ল মন্দির, ভুখারী ফিরিয়া চলে,
তিমির রাত্রি, পথ জুড়ে তার ক্ষুদার মানিক জ্বলে!
ভুখারী ফুকারি’ কয়,
‘ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়!’


মসজিদে কাল শিরনী আছিল, অঢেল গোস্ত রুটি
বাঁচিয়া গিয়াছে, মোল্লা সাহেব হেসে তাই কুটিকুটি!
এমন সময় এলো মুসাফির গায়ে-আজারির চিন্
বলে ‘বাবা, আমি ভুকা ফাকা আছি আজ নিয়ে সাত দিন!’
তেরিয়াঁ হইয়া হাঁকিল মোল্লা - “ভ্যালা হ’ল দেখি লেঠা,
ভুখা আছ মর গো-ভাগাড়ে গিয়ে! নামাজ পড়িস বেটা?”
ভুখারী কহিল, ‘না বাবা!’ মোল্লা হাঁকিল – তা’ হলে শালা
সোজা পথ দেখ!’ গোস্ত-রুটি নিয়া মসজিদে দিল তালা!
ভুখারী ফিরিয়া চলে,
চলিতে চলিতে বলে-
“আশিটা বছর কেটে গেল, আমি ডাকিনি তোমায় কভু,
আমার ক্ষুদার অন্ন তা’বলে বন্ধ করোনি প্রভু
তব মসজিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী,
মোল্লা-পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবী!” 


পথহারা   

কাজী নজরুল ইসলাম  

বেলা শেষে উদাস পথিক ভাবে, 
সে যেন কোন অনেক দূরে যাবে - 
উদাস পথিক ভাবে। 

‘ঘরে এস’ সন্ধ্যা সবায় ডাকে, 
‘নয় তোরে নয়’ বলে একা তাকে; 
পথের পথিক পথেই বসে থাকে, 
জানে না সে কে তাহারে চাবে। 
উদাস পথিক ভাবে। 

বনের ছায়া গভীর ভালোবেসে 
আঁধার মাথায় দিগবধূদের কেশে, 
ডাকতে বুঝি শ্যামল মেঘের দেশে 
শৈলমূলে শৈলবালা নাবে - 
উদাস পথিক ভাবে। 

বাতি আনি রাতি আনার প্রীতি, 
বধূর বুকে গোপন সুখের ভীতি, 
বিজন ঘরে এখন সে গায় গীতি, 
একলা থাকার গানখানি সে গাবে - 
উদাস পথিক ভাবে। 

হঠাত্‍ তাহার পথের রেখা হারায় 
গহন বাঁধায় আঁধার-বাঁধা কারায়, 
পথ-চাওয়া তার কাঁদে তারায় তারায় 
আর কি পূবের পথের দেখা পাবে 
উদাস পথিক ভাবে। 
 ____________________________________________________________

মোরা ঝঞ্জার মত উদ্যম    

কাজী নজরুল ইসলাম  

মোরা ঝঞ্ঝার মত উদ্দ্যম 
মোরা ঝর্ণার মত চঞ্চল, 
মোরা বিধাতার মত নির্ভয় 
মোরা প্রকৃতির মত স্বচ্ছল।। 
মোরা আকাশের মত বাঁধাহীন 
মোরা মরু সঞ্চার বেদুঈন, 
বন্ধনহীন জন্ম স্বাধীন 
চিত্তমুক্ত শতদল।। 
মোরা সিন্ধু জোঁয়ার কলকল 
মোরা পাগলা জোঁয়ার ঝরঝর। 
কল-কল-কল, ছল-ছল-ছল 
মোরা দিল খোলা খোলা প্রান্তর, 
মোরা শক্তি অটল মহীধর। 
হাসি গান শ্যাম উচ্ছল 
বৃষ্টির জল বনফল খাই- 
শয্যা শ্যামল বনতল।। 
 ___________________________________________________________

সর্বহারা     

কাজী নজরুল ইসলাম  

ব্যথার সাতার-পানি-ঘেরা 
চোরাবালির চর, 
ওরে পাগল! কে বেঁধেছিস 
সেই চরে তোর ঘর? 
শূন্যে তড়িৎ দেয় ইশারা, 
হাট তুলে দে সর্বহারা, 
মেঘ-জননীর অশ্রুধারা 
ঝ’রছে মাথার’ পর, 
দাঁড়িয়ে দূরে ডাকছে মাটি 
দুলিয়ে তরু-কর।। 

কন্যারা তোর বন্যাধারায় 
কাঁদছে উতরোল, 
ডাক দিয়েছে তাদের আজি 
সাগর-মায়ের কোল। 
নায়ের মাঝি! নায়ের মাঝি! 
পাল তু’লে তুই দে রে আজি 
তুরঙ্গ ঐ তুফান-তাজী 
তরঙ্গে খায় দোল। 
নায়ের মাঝি! আর কেন ভাই? 
মায়ার নোঙর তোল্‌। 

ভাঙন-ভরা ভাঙনে তোর 
যায় রে বেলা যায়। 
মাঝি রে! দেখ্‌ কুরঙ্গী তোর 
কূলের পানে চায়। 
যায় চ’লে ঐ সাথের সাথী 
ঘনায় গহন শাঙন-রাতি 
মাদুর-ভরা কাঁদন পাতি’ 
ঘুমুস্‌ নে আর, হায়! 
ঐ কাঁদনের বাঁধন ছেঁড়া 
এতই কি রে দায়? 

হীরা-মানিক চাসনি ক’ তুই, 
চাস্‌নি ত সাত ক্রোর, 
একটি ক্ষুদ্র মৃৎপাত্র- 
ভরা অভাব তোর, 
চাইলি রে ঘুম শ্রানি–হরা 
একটি ছিন্ন মাদুর-ভরা, 
একটি প্রদীপ-আলো-করা 
একটু-কুটীর-দোর। 
আস্‌ল মৃত্যু আস্‌ল জরা, 
আস্‌ল সিঁদেল-চোর। 

মাঝি রে তোর নাও ভাসিয়ে 
মাটির বুকে চল্‌! 
শক্তমাটির ঘায়ে হউক 
রক্ত পদতল। 
প্রলয়-পথিক চ’ল্‌বি ফিরি 
দ’লবি পাহাড়-কানন-গিরি! 
হাঁকছে বাদল, ঘিরি’ ঘিরি’ 
নাচছে সিন্ধুজল। 
চল্‌ রে জলের যাত্রী এবার 
মাটির বুকে চল্‌ ।। 
[ বাংলা বই পড়া ]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন