Hazrat Umar (ra.): Biography

Islamic Women

শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০১৩

মুরসিকে সরে যেতে হলো যে কারণে (বিশ্লেষণ)

মুরসিকে সরে যেতে হলো যে কারণে 

  

গত বছর জুনে মিসরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর মোহাম্মদ মুরসি ইসলামের মহান শাসক হজরত আবু বকর সিদ্দিকের একটি উক্তি উদ্ধৃত করে দেশবাসীকে বলেছিলেন, ‘যতক্ষণ আমি ন্যায়পরায়ণ থাকব, আমি আল্লাহর দাসত্ব করব, ততক্ষণ আমাকে সহায়তা করবেনআল্লাহর দাসত্ব না করলে আমার কথা শুনবেন না
ভাগ্যের পরিহাস, মিসরের জনগণের একাংশ তার ওপর থেকে সমর্থন তুলে নিয়েছেনতবে আল্লাহর দাসত্ব না করার কারণে নয়, বরং ইসলামের ওপর অবিচল থাকার জন্য
মিসরের পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট মুরসি চেয়েছিলেন, ইসলামের ঐহিত্যবাহী এই দেশটি পরিচালিত হবে ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতেএজন্য সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনেছিলেন তিনিসম্ভবত এটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছেরাজনৈতিক ইসলামেরশত্রুরা তাকে মেনে নিতে পারেননি 
তাই ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র এক বছরের মাথায় বুধবার তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছেকথিত বিক্ষোভের অজুহাতে অবাধ নির্বাচনে জয়ী একজন প্রেসিডেন্টকে বন্দুকের নলের মাথায় সরিয়ে দিয়ে তাকে বন্দি করা হয়েছেযারা গণতন্ত্রের কথা জোরেশোরে বলে বেলায়, তারা প্রকাশ্যেই এই গণতন্ত্রবিনাশী তত্পরতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন 
মুরসির অপরাধ কী?
তৃতীয় বিশ্বের দেশে দেশে আমরা শাসকদের দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতির কথা খুব শুনিকিন্তু মুরসির বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ নেই মোটেইশাসকরা অন্য যে কারণে জনগণের বিরাগভাজন হন, তার একটি হলো ব্যর্থতাতবে পাহাড়সমান সমস্যা নিয়ে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করা একটি দেশের শাসকের সাফল্য ব্যর্থতা মূল্যায়নে এক বছরই কি যথেষ্ট?
অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ২০১১ সালের বিশ্বকাঁপানো এক বিপ্লবের মাধ্যমে মিসরবাসী স্বৈরশাসনের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার পর উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন, কিন্তু মুরসি হয়তো সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি
মোবারকবিরোধী আন্দোলনের পর থেকে মিসরীয় অর্থনীতির অন্যতম খাত পর্যটন ব্যবসায় ধস নামেবিপর্যস্ত অর্থনীতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারেননি তিনিআইএমএফের ৪৮০ কোটি ডলারের একটি ঋণচুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছিলআশা করা হয়েছিল এই অর্থটা পেলে মিসরীয় অর্থনীতিতে কিছুটা গতি ফিরবেমুরসি দায়িত্ব নেয়ার পর আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা শুরু হলেও এখনও চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়নিওই ঋণ পেতে হলে জ্বালানিতে ভর্তুকি বিপুলহারে কমানো হতোফলে এতে জনগণের ওপর তাত্ক্ষণিক কষ্টের বোঝা চাপততাই হয়তো ধীরে চলার কৌশল নিয়েছিলেন মুরসি
তবে অর্থনৈতিক সমস্যার চেয়েও মুরসিবিরোধী বিক্ষোভের প্রধান কারণ ছিল রাজনৈতিক, বিশেষ করে রাজনৈতিক ইসলামমধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম ইসলামী সংগঠন ব্রাদারহুডের এই নেতা চেয়েছিলেন ইসলামী মূল্যবোধ দ্বারা শাসিত হবে তার দেশকিন্তু কয়েক যুগের কথিত ধর্মনিরপেক্ষতায় অভ্যস্ত মিসরের প্রভাবশালী সেনাবাহিনী ও বিচারবিভাগ মুরসির এই নীতি মেনে নিতে পারেনিতাছাড়া মুরসি যেভাবে অগ্রসর হচ্ছিলেন, তাতে সেনাবাহিনীর দাপট দিন দিনই কমে আসছিলঅথচ গত ৬০ বছর ধরে কার্যত এই সেনাবাহিনীই মিসর শাসন করেছে 
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মিসরের পতিত স্বৈরশাসক হোসনি মোবারক আমলের নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারক ও উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারাতারা পদে পদে মুরসিকে বাধা দিয়েই আসছিলশেষ পর্যন্ত এসব শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতা কেড়ে নেয় সেনাবাহিনীঅনেক বিশ্লেষক বলছেন, মুরসিবিরোধী বিক্ষোভ ছিল সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের নীল নকশারই অংশ 
দৃশ্যত সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলকে প্ররোচিত করেছেন মিসরের মোবারক ও বামপন্থী নেতাকর্মীরাতবে তাদের মোহ হয়তো অচিরেই কেটে যাবেক্ষমতা নিয়েই সেনাবাহিনী আলজাজিরার মিসরীয় টিভি স্টেশন মুবাশের মিসরসহ ইসলামপন্থী চারটি চ্যানেল বন্ধ করে দিয়েছে 
দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, যে কোনো বিচারে একটি বৈধ সরকারকে উত্খাত করে অস্ত্রের মুখে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করলেও পশ্চিমা বিশ্বসহ বেশিরভাগ দেশই এর নিন্দা করেনিসৌদি বাদশাহ তো কার্যত একে অভিনন্দন জানিয়েছেনওবামা গভীর উদ্বেগপ্রকাশ করলেও এই অভ্যুত্থানকে অভ্যুত্থান বা ক্যু বলে উল্লেখ করেননি 
একই পথের যাত্রী যুক্তরাজ্য সরকারওমধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য স্বৈরশাসকরাও মুরসির বিদায়ে উল্লসিততারা চায়নি মিসরে ইসলামী ব্রাদারহুডের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তাদের দেশেও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্মেষ ঘটুকসিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদ মুরসির বিদায়ে রাজনৈতিক ইসলামেরসমাপ্তি দেখছেন 
তবে এ ঘটনাকে অগণতান্ত্রিক বলে আখ্যায়িত করেছে তুরস্ক আর সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে তিউনিসিয়া
অনেকেরই ধারণা, আরব দুনিয়ায় রাজতন্ত্রের প্রধান পৃষ্ঠপোষক আমেরিকা এবং তাদের সহযোগীরা চায়নি মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামী ব্রাদারহুডের মতো ঐতিহ্যবাহী একটি ইসলামী শক্তির বিকাশ ঘটুকএতে ইহুদিবাদী ইসরাইলের অস্তিত্ব সঙ্কট তৈরিসহ মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা স্বার্থ দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে 
লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই মিসরে নবীন গণতন্ত্রকে কবর দেয়ার যাত্রায় সহযোগীর ভূমিকা নিয়েছে মিসরের আদালতগতকাল মিসরের সাংবিধানিক আদালতের প্রধান বিচারপতি আদলি মনসুর অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেনসেনাবাহিনীর পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন সংবিধান তৈরি এবং নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত মনসুর ক্ষমতায় থাকবেন
তবে মিসরের বহু জনগণ তাদের নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে, তাতে ক্ষুব্ধএর প্রমাণ দেখা যায়, মুরসির সমর্থনে মিসরে লাখো জনতা সমাবেশ করেছেতবে এসব খবর তেমন গুরুত্ব পায়নি পশ্চিমা গণমাধ্যমে 
মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করেই ক্ষান্ত হয়নি সেনাবাহিনী, তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে ক্যান্টনমেন্টেকোনো কারণ ছাড়াই তার দল ইসলামী ব্রাদারহুডের নেতাদের ধরপাকড় শুরু হয়েছে 
বিশ্লেষকরা বলছেন, মিসরের বর্তমান ঘটনাপ্রবাহ মুসলিম বিশ্বের উদীয়মান শক্তি তুরস্কের গত শতাব্দীর শেষের ঘটনারই পুনরাবৃত্তিসেখানে একটি ইসলামপন্থী সরকারকে বারবার সেনাবাহিনী ও বিচার বিভাগের অবিচারের মুখে পড়তে হয়েছেতবে শেষ পর্যন্ত জনগণের ইচ্ছারই জয় হয়েছেতুরস্কের একে পার্টি আজ দেশটির অপ্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক শক্তিতুরস্ককে তারা বিশ্ব রাজনীতির নেতৃত্বে নিয়ে এসেছেনানা চড়াই-উত্রাই পেরিয়ে মিসরে তুরস্কের ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি হবেসেজন্য কত সময় লাগে আর কত রক্ত ঝরাতে হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। 
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2013/07/05/206961#.UdaQFvn8WZF

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন