আবারও আলোচনায় আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব
সাধারণ আপেক্ষিকতা বা আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব (General Theory of Relativity) বলতে বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের মহাকার্ষের জ্যামিতিক তত্ত্বকে বোঝায়। এটি বিশেষ আপেক্ষিকতা এবং নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্বকে একীভূত করার মাধ্যমে সৃষ্টি। আবারও আলোচনায় ১৯১৫ সালে প্রকাশিত আইনস্টাইনের সেই আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, কিছু কিছু চরম অবস্থায় বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব ঠিক মতো কাজ করে না। উদাহরণসরূপ, আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব, কোয়ান্টাম তত্ত্বের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বিজ্ঞানীরা মাধ্যাকর্ষণ বর্ণনা করার জন্য এমন তাত্ত্বিক কিছুর খোঁজ করছেন যেটি এ অসম্পূর্ণতা পূরণ করবে।
সদ্য আবিষ্কৃত একটি পালসার অর্থাৎ সূর্যের ভরের প্রায় দিগুণ ভর সম্পন্ন একটি নিউট্রন নক্ষত্র এবং তার সাদা বামন সহচর যেগুলো একে অপরকে প্রতি আড়াই ঘন্টায় প্রদক্ষিণ করে, মাধ্যাকর্ষন তত্ত্বের একটি বাস্তব প্রমাণ প্রদর্শন করেছে। PSR J0348+0432 নামক ব্যবস্থাটির মধ্যে প্রাপ্ত ফলাফল সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এ ধরনের একটি ব্যবস্থায় কক্ষপথের ক্ষয় এবং মহাকর্ষীয় তরঙ্গ নির্গত হওয়ার মাধ্যমে শক্তি বের হয়। দীর্ঘ সময় ধরে কোন পালসারের রেডিও পালস খুব সঠিকভাবে পরিমাপ করার মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা কক্ষপথের ক্ষয়ের হার এবং মহাকর্ষীয় বিকিরণ নির্গত হওয়ার মান নির্ণয় করতে পারেন।
PSR J0348+0432 ব্যবস্থাটির মধ্যের বড় নক্ষত্রটির ভর, তার সঙ্গী নক্ষত্রটির নৈকট্য এবং তার সাথে নিবিড়তা অন্যান্য নিউট্রন তারাদের মতো নয়। সব কিছু মিলে এ ব্যবস্থাটি মাধ্যাকর্ষণের বিকল্প তত্ত্বের জন্য এক অভূতপূর্ব সুযোগ তৈরি করেছে।
এ অভূতপূর্ব ব্যবস্থা দেখার পর বিজ্ঞানীরা ভাবছেন, সাধারণ আপেক্ষিকতার সমীকরণ, নির্গত মহাকর্ষীয় বিকিরণের পরিমাণ ঠিকভাবে নাও দিতে পারে। যার ফলে কক্ষপথ ক্ষয়ের হার পরিবর্তীত হয়। বিজ্ঞানীরা মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্বের সাথে তুলনা করে মনে করেন, মাধ্যাকর্ষণ নিয়ে এ সিস্টেমে আরও বেশি সঠিক ফলাফল পাওয়া সম্ভব।
জার্মানীতে অবস্থিত ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনিস্টিটিউটের রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি বিভাগের পওলো ফ্রেইরে বলেন, “ আমরা ভেবেছিলাম, এ ব্যবস্থাটি সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্বকে হিলিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট হবে। কিন্তু সেটা না হয়ে এখানে আইনস্টাইনের ভবিষ্যৎবানী বেশ ভালোভাবেই প্রতিয়মান হয়েছে”।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, উন্নত যন্ত্রপাতির সাথে তারা প্রথমবারের মতো মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সরাসরি সণাক্তকরার আশা করছেন। গবেষকরা এসব উন্নত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করায় অধিক ঘনত্বের নিউট্রন নক্ষত্রের কিংবা ব্ল্যাকহোলের ভিতরের সহিংস দুর্ঘটনার ফলে নির্গত মহাকর্ষীয় তরঙ্গ নির্গত হওয়ার পরিমাণ নির্ণয়ের আশা করছেন।
সবথেকে উন্নত যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেয় মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সনাক্ত করা অত্যন্ত কঠিন। গবেষকরা মনে করেন, এ ধরণের তরঙ্গ সনাক্ত করার জন্য তাদের সে তরঙ্গটির বৈশিষ্ট্য জানাটা জরুরী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন