বাজারের দুধ এর রকম-সকম
নিঃসন্দেহে দুধ হচ্ছে মানুষের জন্য এক অনুপম কার্যকরী এবং পুষ্টি গুন সম্পন্ন খাবার যা প্রায় ২০০ টি খাদ্য উপাদানের অপূর্ব উৎস।[১] আজ থেকে প্রায় ৬০০০ বছর পূর্বে দুধ উৎপাদন শুরু হয়।[২] গো-উৎসই আমাদের দেশের দুধের প্রধান উৎস। দুধের উৎপাদন হয় মূলতঃ গ্রামে এবং তা সবচে’ বেশি খাওয়া হয় শহরে। আমাদের দেশ ট্রপিকাল অঞ্চলে অবস্থিত বলে দুধ নষ্ট হয় তারাতারি। কারন সাধারন তাপমাত্রায় দুধ তিন ঘন্টার মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়।[৩] এই জন্য বিক্রির পূর্বে যথাযথ সংরক্ষন, প্রক্রিয়াজাতকরন, নির্বীজকরন, প্যাকেটজাতকরন এবং যথাযথ ভাবে বিক্রি করা আবশ্যক। আমরা শহরে দোকান বা সুপার স্টোরে যে দুধ কিনতে পাই, তাই মার্কেট মিল্ক । কাঁচা দুধ বা সঠিক ভাবে রান্না/প্রক্রিয়াজাতকরন, নির্বীজকরন না করা দুধ হতে পারে ব্যাকটেরিয়া,মোল্ড,ঈস্ট এবং ভাইরাসের উৎস। অনেক সময় যারা হতে পারে প্রানঘাতী। দুধ মুলতঃ আমারা তরল অবস্থায় পাই। এ ছাড়া দুধ থেকে আরোও প্রায় শতাধিক তরল, কঠিন এবং অর্ধ-তরল খাদ্য তৈরী হয়। একটা পরিসংখানে দেখা গেছে, দুনিয়ার সবচে’ ধনী, শান্তি প্রিয় এবং উন্নত দেশ গুলোর তালিকা তৈরী করা হলে, দেখা যাবে, যে দেশ যতো ধনী, শান্তি প্রিয় এবং উন্নত সে দেশে দুধ ও দুধের তৈরী খাদ্য ততো জনপ্রিয়[৪]! উন্নয়নশীল দেশ গুলো তেও একই চিত্র। দুধ এবং/ অথবা মার্কেট মিল্ক তাই আমাদের দৃষ্টি আর্কষনের দাবিদার।
অনেক কারনে দুধের খাদ্য উপাদানের অনুপাত পরিবর্তন হতে পারে। এমনকি একই গাভীর দুধে ফ্যাট একই দিনে বিভিন্ন অনুপাতের হতে পারে। জাত,খাবার,ঋতু,বয়স,রোগ সহ অনেক কারনে এই পরিবর্তন হতে পারে।[৪] দুধের মূল উপাদান এবং এদের তুলোনামূলক অনুপাত হলোঃ[৫]
উপাদান ------===---পানি ---ফ্যাট ---প্রোটিন/আমিষ ---শুগার/ল্যাক্টোজ ---মিনারেল
শতকরা পরিমান ৮৭.১ ৩.৯ ৩.৩ ৫.০ ০.৭
এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন এ, ডি, ই ,কে, সি ও বি কমপ্লেক্স। মিনেরেলের মধ্যে ক্যালসিয়াম,ফসফেট,ক্লোরিন, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, লোহা, কপার ইত্যাদি। আমাদের দেহের হাড়ের গঠনের সবচ’ দরকারি উপাদন ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের সেরা উৎস হলো দুধ।
আরও আছে প্রয়োজনীয় উন্নত মানের প্রোটিন। এসব উপাদান ছাড়া ভেঙ্গে পরতে পারে মানব দেহের অঙ্গগুলোর স্বাভাবিক কাজ। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর দুধ থেকে পাওয়া যায় ৭৫ কিলোক্যালরি শক্তি।[৫] যে সব কারনে দুধ হতে পারে বিষঃ
১) অসুস্থ গাভি থেকে দুধে আসতে পারে গরুর রক্তের কোষ(লিউকোসাইট)। এমনকি সুস্থ গাভি থেকেও হতে পারে একই ঘটনা। যা দুধের স্বাদ,গন্ধ ও বর্নে আনতে পারে পরিবর্তন।
২) অসুস্থ গাভি থেকে দুধে আসতে পারে অনেক রোগ উৎপাদনকারী জীবানু। ডিপথেরিয়া,টাইফয়েড,আমাশয়,মাথা ব্যাথা, পেশি ব্যাথা,বমি সহ অন্য রোগ হতে পারে[৬]।
৩) সুস্থ গাভির দেহ থেকেও অনেক জীবানু সংক্রমিত হতে পারে।
৪) যে সব পাত্রে দুধ রাখা হয় বা পরিবাহন করা হয়, সেখান থেকেও জীবানু সংক্রমিত হতে পারে।
৫) পাত্রের উপাদান দ্বারা দুধ দূষিত হতে পারে। যেমন কপার,আয়রন, নিকেল এবং এদের সংকর ধাতুর পাত্র দ্বারা দুধে বিষাক্তা সৃষ্টি হয়[৪]।
৬) যে তাপমাত্রায় দুধ রাখা হয়। কারন দুধ হলো জীবানু বংশ বিস্তারের জন্য উত্তম স্থান।
৭) কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া আছে যারা স্পোর উৎপাদন করে দুধে থাকে। এরা সাধারন তাপমাত্রায় বা পাস্তুরাইজেশন করার পরেও বেঁচে থাকে।
প্রক্রিয়াজাতকরনঃ
প্রক্রিয়াজাতকরনের উদ্দেশ্য হলো জীবানুর সংখ্যা ও এনজাইমের কাজ কমানো বা ধংস করা এবং দীর্ঘ সময় সংরক্ষন ও ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী দ্রবে কাংক্ষিত পরির্বতন সাধন। এজন্য দুটি প্রধান প্রক্রিয়া অনুসরন করা হয়।
ক) পাস্তুরাইজেশনঃ
পাস্তুরাইজেশনের উদ্দেশ্য হলো রোগ উৎপাদনকারী জীবানু মুক্ত করা। এই প্রক্রিয়ায় সব জীবানু মারা হয় না। তাই দুধ নষ্ট হবার ঝুকি থাকে বেশি। এ জন্য পাস্তুরাইজেশনের মাধ্যমে প্রাপ্ত দুধ নিচু(৭০সে. বা এর নিচে)তাপমাত্রায় সংরক্ষন করা হয়। নিচু তাপমাত্রায় দুধ সাধারনত ৭ দিনের মতো ভাল থাকে। এর নিচু তাপে দুধে অবস্থিত ইমালসিফায়ার সিস্টেম নস্ট হয়ে যায়[৭]।এতে
দুধের অনু ভেঙ্গে যায়,পাত্রের নিচে তলানি পরে। তাছাড়া জীবানু বংশ বৃদ্ধি করে দুধকে নষ্ট করতে পারে। তাই পাস্তুরাইজেশনের মাধ্যমে প্রাপ্ত দুধ শতভাগ নিরাপদ নয়।
এই প্রক্রিয়া ৬৩০ সে. তাপমাত্রায় ৩০ মিনিট বা ৭২-৭৫০ সে. তাপমাত্রায় ১৫-২০ সেকেন্ড তাপ দেওয়া হয়। এই তাপমাত্রায় রোগ উৎপাদনকারী জীবানু ধংস হয়। কিন্তু সব জীবানু রোগ উৎপাদনকারী করে না বা স্পোর তৈরি করে তারা টিকে থাকে। এরা দুধের স্বাদ, রঙ বা মান নস্ট করে[৫]।
তাছাড়া এই প্রক্রিয়ায় ভিটামিন বি (থাইয়ামিন) ৬.৮% নস্ট হয় এবং ভিটামিন সি নস্ট হয় ১০ % [৬]।
খ) ইউ এইচ টিঃ
Ultra High Temperature বা ইউ এইচ টি প্রক্রিয়ায় দুধ সম্পুর্ন জীবানু মুক্ত হয় ।এই প্রক্রিয়ায় দুধ ১৩৫০সে. তাপমাত্রায় ১-২ সে. তাপ প্রয়োগ করা হয়। এতে সব জীবানু ধংস হয়। এই প্রক্রিয়া খুব জটিল এবং ব্যয়বহুল। আমাদের দেশে মাত্র হাতে গোনা দুই বা তিনটি ব্রান্ড ইউ এইচ টি প্রক্রিয়ায় দুধ উৎপাদন করে। এবং বিশেষ প্যাকেটে প্যাকেটজাতকরন করা হয়। পাস্তুরাইজেশনের উৎপন্ন্য দুধ কম তাপে সংরক্ষন করা হয়। কিন্তু ইউ এইচ টি দুধ সংরক্ষনের জন্য কম তাপের প্রয়োজন হয় না। স্বাভাবিক তাপে এই দুধ ৬ মাসের বেশি ভালো থাকে। ইউ এইচ টি দুধে কোন ভিটামিন বা পুষ্টি গুন নস্ট বা পরিবর্তন হয় না[৬]। এছাড়া টক বা নস্ট দুধ ইউ এইচ টি প্রক্রিয়ায়
প্রক্রিয়ায়জাতকরন করা যায় না। তাই ইউ এইচ টি দুধ সবচে’ নিরাপদ এবং খাঁটি।
charidike vejaler berajal...........
উত্তরমুছুনThanks for this nice post.