পরমশূন্য তাপমাত্রার নিচে কোয়ান্টাম গ্যাস ...
১৯ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে লর্ড কেলভিন এমনভাবে কেলভিন স্কেল তৈরি করেন যাতে পরম শূন্য তাপমাত্রার চেয়ে ঠাণ্ডা আর কিছু না থাকতে পারে। পদার্থবিদরা পরবর্তীতে উপলব্ধি করেন যে কোন পদার্থের পরম তাপমাত্রা ঐ পদার্থের অণুসমূহের গড় শক্তির সাথে সম্পর্কিত। পরম শূন্য তাপমাত্রায় অণুসমূহের কোন শক্তি থাকেনা আর উচ্চ তাপমাত্রায় উচ্চ গড়শক্তি সম্পন্ন অণু থাকে।
তবে ১৯৫০ এর দশকে পদার্থবিদরা যখন আরও জটিল ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করতে থাকেন তারা এটা বুঝতে পারেন যে এটা সবসময় সত্য হয়নাঃ কোন এক ব্যবস্থার পরম তাপমাত্রা নির্ণয় করা হয় নির্দিষ্ট শক্তির অণুসমূহকে এর খুঁজে পাওয়ার সম্ভাব্যতাকে ছককাগজে অঙ্কনের মাধ্যমে।সাধারণত অধিকাংশ অণুসমূহের শক্তির পরিমাণ গড় শক্তি বা তার কাছাকাছি থাকে, আর অল্প সংখ্যক অণু উচ্চ শক্তির দিকে ধাবিত হয়। তাত্ত্বিকভাবে যদি এর উল্টো ঘটনা ঘটে অর্থাৎ যদি অধিকাংশ অণুসমূহের শক্তি নিম্ন শক্তির পরিবর্তে উচ্চ শক্তির দিকে ধাবিত হয় তাহলে অঙ্কিত ছক উল্টে যাবে। এর ফলে পরম তাপমাত্রার ধনাত্মক চিহ্ন পরিবর্তিত হয়ে ঋণাত্মক চিহ্ন হবে।–বিষয়টিকে এভাবে উপস্থাপন করেন মিউনিখ,জার্মানির লাডওয়িগ মাক্সিমিলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ উলরিখ স্নাইডার।
স্নাইডার ও তার সহকর্মীগণ পটাসিয়াম অণু দ্বারা তৈরি অতিশয় ঠাণ্ডা কোয়ান্টাম গ্যাসের মাধ্যমে এরূপ পরমশূন্য তাপমাত্রার কাছাকাছি তাপমাত্রায় পৌছাতে সক্ষম হন। লেসার এবং চুম্বকক্ষেত্র ব্যবহারের মাধ্যমে তারা প্রত্যেক অণুকে একটি নির্দিষ্ট বিন্যাসে রাখতে সক্ষম হন। ধনাত্মক তাপমাত্রায় অণুসমূহ একে অপরকে বিকর্ষণ করে বিন্যাসটিকে স্থায়ী করে তুলে। দলটি অতঃপর চুম্বকক্ষেত্রের পরিবর্তনের মাধ্যমে অণুসমূহকে একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট করে তুলে।স্নাইডারের মতে,এর ফলে অণুসমূহ তাদের সবচেয়ে স্থায়ী অবস্থান সর্বনিম্ন শক্তির কক্ষপথ হতে সরে কোন ধরণের প্রতিক্রিয়া প্রদর্শনের পূর্বেই সম্ভাব্য সর্বোচ্চ শক্তির কক্ষপথে চলে যায়।এটাকে এভাবে ধরা যায় যে আপনি কোন উপত্যকায় হাটছেন আর তখনই হটাৎ আপনি নিজেকে পাহাড়ের চুড়োয় খুঁজে পেলেন।
ধনাত্মক তাপমাত্রায় এরূপ পরিবর্তনের ফলে অণুসমূহ কেন্দ্রের দিকে ধাবিত হয়ে তাকে অস্থিতিশীল করে তুলে।তবে এ ক্ষেত্রে দলটি লেসার ক্ষেত্রটিকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন যাতে অণুসমূহ তাদের অবস্থানে থাকে আর শক্তির বিন্যাস অধিক অনুকূলে থাকে।বিজ্ঞানের আজ ব্যাখ্যা করা এই ফলাফল এই গ্যাসটির পরমশূন্য তাপমাত্রার অল্প একটু বেশি থেকে পরমশূন্য তাপমাত্রার চেয়ে এক কেলভিনের কয়েক বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ নিচে গমনকে চিহ্নিত করে।
MIT এর একজন নোবেল লরেট ও পদার্থবিদ উলফগ্যাং কেটারলি পূর্বে চৌম্বকক্ষেত্রে ঋণাত্মক পরম তাপমাত্রা প্রদর্শন করেছিলেন। তিনি এই নতুন আবিষ্কারকে আখ্যা দিয়েছেন “এক্সপেরিমেন্টাল ট্যুর দে ফোর্স” হিসেবে।অতিউচ্চ শক্তির স্তর ধনাত্মক তাপমাত্রায় পরীক্ষাগারে তৈরি করা কষ্ট,তবে ঋণাত্মক পরম তাপমাত্রায় এরা স্থিতিশীল হয়।ব্যাপারটিকে তিনি তুলে ধরেন এভাবে, এটা অনেকটা একটি পিরামিডকে তার মাথায় উলটানোর ভয় ছাড়া খাড়া করে রাখার মত।তিনি আরও বলেন যে এর ফলে পরীক্ষাগারে নতুন পদার্থ তৈরি করতে সহায়তা করতে পারে।
জার্মানির কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিদ অসিম রখ সন্দেহ করেন যদি স্নাইডার ও তার দলের যন্ত্রটি তৈরি হয় তবে এরূপ ব্যবস্থা অদ্ভুত রকমের আচরণ করবে। উদাহারণস্বরূপ রখ এবং তার দল হিসেব করেছেন যে অণুসমূহের মেঘ সর্বদা অভিকর্ষের কারণে নিম্নমুখী হয়। যদি মেঘটির এক অংশ ঋণাত্মক পরমতাপমাত্রা সম্পন্ন হয় তবে কিছু অণু ঊর্ধ্বগামী হবে আর এ ক্ষেত্রে তা অভিকর্ষের বিরুদ্ধে কাজ করবে।
এই গ্যাসটির অপর একটি অভিনব ব্যাপার হল যে এটি ডার্ক এনার্জিকে নকল করে। ডার্ক এনার্জি হল এমন এক রহস্যময়ী বল যা অভিকর্ষের প্রভাবের বিরুদ্ধে কাজ করে মহাবিশ্বকে দ্রুতগতিতে বিস্তার করে চলেছে। স্নাইডার তুলে ধরেন যে দলটির প্রস্তুতকৃত গ্যাসের একে অপরকে আকর্ষণকারী অণুসমূহ অভিকর্ষের কারণে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে চায় তবে হতে পারে না কারণ ঋণাত্মক পরম তাপমাত্রা তাদের স্থির করে তুলে।তিনি আরও বলেন, “ এটি কৌতূহলজনক যে পরীক্ষাগারে ও মহাবিশ্বে এই গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলটি একই আসে।এই বিষয়টি নিয়ে বিশ্বতাত্তিকদের আরও ঘেঁটে দেখা উচিত”।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন