বঙ্গবীরের বঙ্গীয় বচন .....
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম
এক মাস আগে হেফাজতে ইসলাম নামে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক একটি ইসলামী দল ৫ মে ঢাকা অবরোধ করেছিল। মুসলমানের ঘরে জন্ম, আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রেখে মুসলমান হিসেবে মরতে চাই। তাই গাবতলী আমিনবাজারে হেফাজতীদের অবস্থান দেখতে গিয়েছিলাম। একমাত্র বাঁশি ফুঁ ছাড়া তাদের কাজকর্মে খুশি হয়েছি। তারা ওই সময় বাঁশি ছেড়ে আল্লাহ আল্লাহ করলে অনেক ভালো করত। আমি কয়েক বোতল পানি নিয়ে গিয়েছিলাম। যখন হাজার হাজার মানুষের মধ্য দিয়ে হেঁটে মিরপুর ব্রিজের দিকে যাচ্ছিলাম তখন কতজন আমাকেই পানির বোতল দিয়েছে যার কোনো প্রয়োজনই ছিল না। এটা-ওটা খেতে দিয়েছে। দেড় ঘণ্টা আগে নাস্তা করেছিলাম। তাই খাওয়ারও কোনো প্রয়োজন ছিল না। যে যা দিচ্ছিল আন্দোলনকারীদের খাইয়ে দিচ্ছিলাম। কয়েক লাখ মানুষের ভেতর এক ঘণ্টা কাটিয়ে যা দেখেছি তা সেখানে সবাইকে জামায়াত, বিএনপি বা শুধু মাদ্রাসা মসজিদের আলেম মনে হয়নি, হাজার হাজার সাধারণ মুসলমানও মনে হয়েছে। আমিও একজন মানুষ হিসেবে, একজন মুসলমান হিসেবে আল্লাহ এবং রাসূলের প্রতি সম্মান দেখাতে ও যারা ইসলামের অবমাননা এবং আল্লাহ রাসূলের অবমাননা করে তার প্রতিকারে অংশ নিতে গিয়েছিলাম। এ জন্য অনেকেই খুশি হয়ে ধন্যবাদ দিয়েছেন। আবার এক মহিলা, মুক্তিযোদ্ধার কন্যা পরিচয়ে বেশ অভদ্রভাবেই বললেন, 'শেষ পর্যন্ত আপনি হেফাজতের ১৩ দফাকে সমর্থন জানিয়েছেন? তাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন?' মনে হলো ভদ্র মহিলা দলকানা। তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা এ জন্য মনে হলো দেশটা যেন তারই। অথচ আমি যে মুক্তিযুদ্ধ করলাম, মুক্তিযোদ্ধাদের চালালাম, পাকিস্তানি হানাদারদের পায়ের সামনে নতজানু হয়ে আত্দসমর্পণে বাধ্য করলাম_ এদেশ যেন আমার নয়। যেহেতু তিনি আওয়ামী ঘরানার সেহেতু দেশের মালিক-মোক্তার যেন তিনিই। হেফাজতীদের ১৩ দফার সঙ্গে আমি কোনোমতেই একমত নই। আর দেশবাসী ভালো করেই জানেন আমার পোঁ ধরার স্বভাব নেই। আমি যেমন সব রাজাকারের ফাঁসি চাই না, তেমনি কোনো নাস্তিকেরও ফাঁসি চাই না। যারা স্রষ্টাকে মানে না, আল্লাহকে বিশ্বাস করে না_ তাদের সঙ্গে বোঝাপড়া করবেন আল্লাহ। সেখানে আমার দরকার কি? দেশের প্রচলিত আইনে আমি তার বিচার চাই যে আমার আল্লাহ রাসূলের অবমাননা করে, আমার প্রিয় নবীর প্রতি কটূক্তি করে। সেই কটূক্তির বিচার চাই। একেবারে সোজা কথা। আমার দাবি এক দফা_ কটূক্তিকারীদের বিচার চাই। সংবিধানে আল্লাহর প্রতি গভীর আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন চাই। হেফাজতীরাও এই দাবি নিয়ে অগ্রসর হয়েছে। সে জন্য তাদের দেখতে গেছি এবং ওই পর্যন্ত সমর্থন জানিয়েছি। এ জন্য কোরবান হওয়ার প্রয়োজন হলেও আমি পিছপা হব না। বর্তমান সমাজব্যবস্থায় নারীমুক্তি, নারীর অধিকার, সম্পদের অধিকার_ এ আন্দোলনে আমি আবার নারীদের পাশেও থাকব। এ সমাজ শুধু পুরুষের নয়, এ সমাজ নারীরও। নারীরা নিশ্চয়ই পর্দানশিন হবেন, মার্জিত হবেন কিন্তু বন্দিনী হবেন না। মুক্তিযোদ্ধার কন্যার সঙ্গে তর্ক করতে ইচ্ছা হয়নি। তাই তাকে তেমন কিছু বলিনি। আজকাল বড়-ছোটর কোনো মাপ নেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন