স্বাধীনতার পর সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা
নয়া দিগন্ত ডেস্ক
আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় রোববার গভীর রাতে মতিঝিলের শাপলা চত্বর এলাকায় পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির অভিযানের খবর ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। পুলিশি অভিযানে নিহতের সংখ্যা নিয়েও বিভিন্ন মিডিয়ার তথ্যে ভিন্নতা দেখা যায়। সিএনএন জানিয়েছে, এতে ঠিক কতজন নিহত হয়েছে, তা সম্ভবত কখনো জানা যাবে না। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, চার দশক আগে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এটা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা। এএফপির খবরটি হিন্দুস্তান টাইমসসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করে। শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে পাঁচ লক্ষাধিক লোক উপস্থিত ছিল বলে সিএনএনসহ কয়েকটি সূত্র উল্লেখ করে।
স্বাধীনতার পর সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা : এএফপি
এএফপি বাংলাদেশ সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, মতিঝিলে পুলিশ ও ইসলামপন্থীদের যুদ্ধে অন্তত ২৮ জন মারা গেছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে শত শত লোক। চার দশক আগে স্বাধীনতার পর এটাই বাংলাদেশে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা।
পুলিশ বার্তা সংস্থাটিকে জানায়, নগরকেন্দ্রে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে ঢাকার অন্যান্য স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। এই বিক্ষোভের আয়োজক প্রধান ইসলামি গ্রুপটি বলেছে, মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি।
পুলিশ জানিয়েছে, তারা প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান, টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ব্যবহার করেছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পুলিশ পরিদর্শক মোজাম্মেল হক এএফপিকে বলেন, এখানে ১১টি লাশ আনা হয়েছে। এদের একজন পুলিশ। বিক্ষোভকারীরা তাকে হত্যা করেছে। হাসপাতাল কর্মকর্তারা বলেন, শত শত লোক আহত হয়েছে।
এএফপি কাঁচপুরের সংঘর্ষের খবরও জানায়। স্থানীয় পুলিশ প্রধান আবদুল মতিন এএফপিকে বলেন, সেখানে অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছে। এদের তিনজন পুলিশ, একজন বিজিবি। তিনি জানান, এদের পিটিয়ে মারা হয়েছে।
ঢাকায় ভুতুড়ে নীরবতা : সিএনএন
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, যেকোনো সোমবার ঢাকার বাণিজ্যিক কেন্দ্র মতিঝিলে উপচে পড়া ভিড় আর রিকশা আর গাড়ির জটে প্রাণ যায় যায় অবস্থা থাকে। কিন্তু এই সোমবার ছিল ভিন্ন। মতিঝিল মনে হচ্ছিল যুদ্ধক্ষেত্র, জনমানবশূন্য ও বিধ্বস্ত।
এতে বলা হয়, রোববার সারা দিন এবং রাতে পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী ইসলামপন্থীদের সংঘর্ষ হয়। মতিঝিল এলাকায় পাঁচ লাখের বেশি লোক উপস্থিত ছিল বলে অনেক হিসাবে দেখা গেছে। এতে বলা হয়, রোববার গভীর রাতে এসব লোককে ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তা বাহিনীর ১০ হাজার সদস্য অংশ নেয়। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) মৃতের সংখ্যা ১৪ বলে জানিয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন পুলিশ, একজন বিজিবি ও একটি ১২ বছরের বালক।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মানবাধিকার কর্মীরা জানিয়েছেন, মৃতের চূড়ান্ত সংখ্যা অনেক বেশি হবে, যা সরকার গ্রহণ না-ও করতে পারে।
অনলাইন ব্লগ ও ওয়েবসাইটগুলোতে প্রকাশিত ছবিতে, জনাকীর্ণ ভবনের বিভিন্ন সিঁড়ি বা কোনায় মাথা বা পিঠে গুলিবিদ্ধ লোক পড়ে আছে। তাদের দেহ থেকে রক্তের বন্যা বয়ে গেছে।
অভিযানে অংশ নিয়েছে ১০ হাজারের বেশি সদস্য : আলজাজিরা
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, রোববার মতিঝিলে নিরাপত্তা বাহিনী ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যকার সংঘর্ষে অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছে। এতে বলা হয়, রোববার রাতে মতিঝিল এলাকা থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে পুলিশ, র্যাব, বিজিবির ১০ হাজারের বেশি সদস্য অংশ নেয়।
এতে বলা হয়, সোমবার সকালের মধ্যে রাজধানীর প্রধান সড়কটি পরিষ্কার করা হলেও আশপাশের এলাকায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে।
মোট নিহত ১৫ : এপি
বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে রোববার রাত ও সোমবার ইসলামপন্থী ও পুলিশের মধ্যকার সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছে। এতে বলা হয়, মতিঝিল এলাকায় রোববার রাতে সাতজন নিহত হয়েছে। আর সোমবার কাঁচপুরে নিহত হয়েছে অন্তত আটজন।
ঢাকায় নিহত ২২ : টেলিগ্রাফ
যুক্তরাজ্যের টেলিগ্রাফ পত্রিকায় মতিঝিলের ঘটনায় ২২ জন নিহত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ১১টি লাশ আনা হয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন। এ ছাড়া আল বারাকা হাসপাতলে চারজন, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে আরো সাতজন নেয়া হয়। পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, মতিঝিলের সমাবেশে প্রায় দুই লাখ লোক উপস্থিত ছিল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন